‘সর্ব ধর্মান পরিত্যাজ মা মে কং স্মরণং ভজ।’
শ্রীমদ্ভগবত গীতা
শ্রীমদ্ভগবত গীতার গোপন শ্রেষ্ঠ বাণী ‘সর্ব ধর্মান পরিত্যাজ মা মে কং স্মরণং ভজ।’ এ কথার আলোকে শরতের ঠিক মাঝামাঝি কার্তিক মাস, এ সময় ব্রজবাসীরা এক বিশেষ অনুষ্ঠানের অয়োজন করে। যা গোবর্দ্ধন পূজা ও অন্নকূট মহোৎসব নামে খ্যাত। আজ গোবর্দ্ধন পূজা অন্নকুট মহোৎসব। শ্রীমদ্ভগবত গীতার দশম স্কন্ধের নবম ও দশম অধ্যায়ে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত বশ্যতা স্বীকার স্বরূপ দাস বন্ধন লীলা বর্ণিত হয়েছে। যা আসল পুরাণ শ্রীমদ্ভগবতে বিধৃত লীলাদির প্রভূত রস আস্বাদন করেছেন বৈষ্ণব আচার্যগণ। লীলাপুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভৌম লীলায় অনেক চমকপ্রদ লীলা প্রদর্শন করেন।
ইন্দ্র বর্ষার দেবতা। চাষ করতে যেহেতু জলের প্রয়োজন হয়, তাই ইন্দ্রকে তুষ্ট করার জন্য মহারাজ নন্দ-সহ বৃন্দাবনের গোপেরা ইন্দ্রযজ্ঞ করতেন। কৃষ্ণ সর্বজ্ঞ। এমন যজ্ঞের কথা তাঁর কর্ণগোচর হল। তিনি পিতা নন্দর কাছে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। কৃষ্ণ তখন বালক। কিছু বুঝবে না মনে করে নন্দ চুপ করে থাকলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা কৃষ্ণকে বলতেই হল যজ্ঞের কথা। নন্দ বললেন যে, যেহেতু ইন্দ্র বৃষ্টির দেবতা, শস্য উৎপাদন করতে বৃষ্টি লাগে, বৃন্দাবনবাসী এবং গবাদিপশুসকল শস্য খেয়ে জীবনধারণ করে - সেইজন্য ইন্দ্রের পূজো করা কর্তব্য।
সব শুনে কৃষ্ণ নন্দরাজকে এই বলে বোঝালেন যে,
"বাবা, সমুদ্রের মাঝেও বৃষ্টি হয়। সেখানে কেউ ইন্দ্র পূজা করেন না। বহু প্রাচীন এই আচার-বিচার লৌকিকতা সংস্কার বহুবিধ নিয়ম নীতির মধ্য দিয়ে এই সনাতন ধর্ম। মত এবং স্তর ভেদে বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে যার যার কর্ম করে যাচ্ছে। কেউ শাখায় বসে, কেউ পাতায় বসে, কেউবা কান্ড ঘেঁসে’ আবার কেউ কেউ মূল শিকড়ের সন্ধানে নীরব নিথরভাবে জীবন যাপন করছেন। মূল সত্যকে জানাই হচ্ছে ধর্ম। আমরা চাঁদের আলোতে আলোকিত হই। কিন্তু চাঁদ কোথা থেকে আলোকিত, তা জানার চেষ্টা করি না। যারা চাঁদের আলোর উৎসের সন্ধান জেনেছেন তারাই প্রকৃত জ্ঞানী। সেই সব জ্ঞানীরা মহান আলোর উৎসের বেদীমূলে নিজকে উৎসর্গ করে ধন্য হয়েছেন। আজ অনেকেই শাস্ত্রীয় পথে না গিয়ে লৌকিক আচার পালন করছেন। লৌকিক আচার পালন করে বর্তমান আনন্দ লাভ হতে পারে, তাতে পারমার্থিক লাভ নেই। আমাদের জীবিকা যে গোপালন, গাভী বর্ধনের জন্য আমরা গোবর্ধনের কাছে ঋণী। ইন্দ্রের কাছে নয়। চলো আমরা গোবর্ধনের পূজা করি।" প্রত্যেক দেবতারই কাজ নির্দিষ্ট করা আছে এবং তারা সেই কাজ যথাযথভাবেই সম্পাদন করে থাকেন। নিজেদের কাজ ঠিকঠাক না করলে প্রত্যেককেই কর্মফল ভোগ করতে হবে। তাই আলাদা করে ইন্দ্রযজ্ঞ করার কোন দরকার নেই। তার থেকে গাভীসকলকে – যা জীবনধারণের অবলম্বন, গিরিরাজ গোবর্ধন ও বৃন্দাবনের অরণ্যরাজিদের – যাদের সাথে গভীর সম্পর্ক এবং সকল ব্রাহ্মণ ও ক্ষুধার্তদের ভালভাবে সেবা করানোই উচিত কাজ হবে। শেষপর্যন্ত কৃষ্ণের কথায় সকলে সম্মত হলেন। ইন্দ্রের জন্য যেসকল উপকরণের আয়োজন করা হয়েছিল তাই দিয়ে তৈরী হল শতাধিক নানানধরণের খাবার। তারপর সেই খাবার দিয়ে গাভী, গোবর্ধন পর্বত, অরণ্য, ব্রাহ্মণ, ক্ষুধার্তদের ভাল করে ভোজন করানো হল – যা ‘অন্নকূট’ নামে পরিচিত।
এদিকে ইন্দ্রযজ্ঞ তো আর হল না। কিন্তু ইন্দ্রও ছেড়ে দেবার পাত্র নন। রুষ্ট হয়ে তিনি প্রবল বৃষ্টি নামালেন। বৃন্দাবন ভেসে গেল, সকলের খুবই দুরবস্থা। এই অবস্থায় কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে হাতে তুলে নিয়ে ছাতার মত বৃন্দাবনের মাথার ওপর ধরে রাখলেন, সকলের প্রাণরক্ষা হল। এমনভাবে দিনসাতেক অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে ইন্দ্র হার স্বীকার করে কৃষ্ণের সঙ্গে সন্ধি করলেন।
সেই থেকে শুরু হল গিরিগোবর্ধন পূজো আর অন্নকূট উৎসব, যা সাধারণত কার্তিক মাসের অমাবস্যার পরেরদিন পালন করা হয়। কোন কোন বছরে তিথি অনুযায়ী অমাবস্যার দুদিন পরে অনুষ্ঠিত হয়। আজ তেমনই এক দিন। এটি প্রধানত বৈষ্ণবদের উৎসব। কথিত আছে, গোবর্ধন পাহাড়ের রূপ ধরে কৃষ্ণই ভোজন করেছিলেন।
শ্রীল সনাতন গোস্বামীর মতে, দাসবন্ধন লীলাটি হয়েছিল দীপাবলী উৎসবের দিন। তখন শ্রীকৃষ্ণের বয়স ছিল ন্যুনধিক তিন বছর চার মাস। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পাদের মতে, শ্রীকৃষ্ণ গোকূলে ছিলেন তিন বছর চার মাস। এর পর নন্দ মহারাজ ও ব্রজবাসীবৃন্দ যখন বৃষ্টি কামনায় বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র পূজা করবে, তখন বালক শ্রীকৃষ্ণ সে পূজায় বাধা প্রদান করেন।
অন্নকষ্ট. অন্নকূট [কূ]. অন্নকৃচ্ছ্র. অন্নক্লেশ. অন্নগ্রহণ [ণ ]. অন্নচিন্তা. অন্নছত্র. অন্নজল. অন্নজীবী [জী বী]. অন্নত্যাগ. অন্নত্যাগী. অন্নদা 'দুর্গা', তু০ অন্যদা '
No comments:
Post a Comment